৫ জুন কি হয়েছিল বেগম জিয়ার অবশেষে ফাঁস হলো সে রহস্য ?

৫ জুন বেগম খালেদা জিয়ার কি হয়েছিল? তাঁর কি ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছিল? ৫ দিন পর এসব প্রশ্ন নিয়ে উত্তপ্ত আদালত পাড়া এবং রাজনীতি। বেগম জিয়ার অসুস্থতার কথা প্রথমে পাদপ্রদীপে আসে শুক্রবার ৮ জুন। ঐ দিন বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের নেতৃত্বে পরিবারের কয়েকজন সদস্য বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে শামীম ইস্কান্দার রুহুল কবির রিজভীকে টেলিফোন করে বেগম জিয়ার অজ্ঞান হয়ে যাবার কথা বলেন। কারাকক্ষে সাক্ষাৎ শেষে বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের দেখা করার অনুমতি চান। কারা কর্তৃপক্ষ শনিবার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এফ. এম. সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৪ জন বিএনপিপন্থী চিকিৎসককে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে তাঁরা ঘোষণা করেন যে, ৫জুন বেগম জিয়া সম্ভবত মাইল্ড স্ট্রোক করেছিলেন। তারা ৪ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট তৈরি করে কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। আজ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে ঐ রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। ঐ রিপোর্টে দ্রুত বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। এফ. এম. সিদ্দিকীর এই রিপোর্টের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন স্বনামধন্য চিকিৎসকরা।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ. বি. এম আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমি বেগম জিয়াকে দেখিনি। তবে কারাগারে গিয়ে যাঁরা দেখেছেন, তারা ইসিজি এবং রক্ত পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে মাইন্ড স্ট্রোক বললেন তা আমি জানি না।’ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই চিকিৎসক বলেছেন, অনেক সময় ব্লাডে সুগার কমে যাওয়ার কারণে মানুষ অজ্ঞানের মতো হতে পারে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া চোখে দেখে এটা বলা সম্ভব নয়।’ আজ হাইকোর্টেও কুমিল্লার একটি মামলার জামিনে শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন ডাক্তারদের প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, বেগম জিয়া মাইন্ড স্ট্রোক করেছিল। তাঁকে অবিলম্বে জামিন দেওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল কারা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বলেছেন, ৫ জুন বিকেলের দিকে ব্লাড সুগার কমে যাওয়ায় তিনি বেগম জিয়া খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে স্বাভাবিক হয়েছেন।

৫ জুন কী হয়েছিল? কারারক্ষী এবং বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত পরিচারিকার বরাত দিয়ে এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, বিকেল আনুমানিক ৫ টার দিকে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ তিনি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হন। দ্রুত ফাতেমা এবং কারারক্ষীরা তাঁকে বিছানায় শুইয়ে দেন। একজন সার্বক্ষণিক নার্স তাঁকে চকলেট খাইয়ে দেন। ২৫ মিনিটের মধ্যে কারা চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করেন। এরপর বেগম জিয়া জানান যে তিনি সুস্থ বোধ করছেন। ঘটনাটি নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা বলেই কারা কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। কিন্তু ৮ জুন তাঁর আত্মীয়রা ঘটনাটিকে রঙ মাখানোর জন্য রিজভীকে জানান। আর বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা এটাকে ‘রাজনৈতিক ইস্যু’ বানানোর কাজে লাগান। চার চিকিৎসক যে পরামর্শ এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার সুপারিশ করেছেন, সেগুলো সবই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করা যায় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আই জি (প্রিজন) কে অনতি বিলম্বে বেগম জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিতে বলেছেন। কিন্তু কারা সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়া বঙ্গবন্ধুতে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অসম্মতি জানিয়েছেন। তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েই একমাত্র সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার আধুনিক সুবিধা রয়েছে। ঐ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একজন বলেছেন, ‘আমরা অনেক জটিল পরীক্ষা বঙ্গবন্ধুতে রেফার করি।’ সাধারণ ভিড়ের জন্য বিত্তবানরা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এড়িয়ে যান। কিন্তু বেগম জিয়া এবং তাঁর চিকিৎসকরা কেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এড়িয়ে যেতে চাইছেন? অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতির জন্যই কি তাহলে ৫ জুনের নাটক?

বাংলা ইনসাইডার/